রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় নদীর পানিতে ডুবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার, তিনটি ইউনিয়নের মানুষের বাড়িঘর ডুবে গেছে। দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪ শতাধিক পরিবারের ঘরে বিশুদ্ধ পানি ও চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
গত রোববার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী, নোহালী ও কোলকোন্দ ইউনিয়নের যে দিকে চোখ যায়, দেখা যায় তিস্তার পানিতে ডুবে যাওয়া ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশু ও গৃহস্থালি জিনিসপত্র নিয়ে অসহায় বানভাসি পরিবারগুলো, নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে যার যার মতো করে।
অনেকে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে ঘরবাড়ির অবকাঠামোসহ গৃহস্থালি জিনিসপত্র নৌকা করে উঁচু স্থানে বাঁধের পাড়ে সরিয়ে নিচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি ও তীব্র খাবার সংকট পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
শুধু তাই নয় কৃষকের বোনা সব ধরনের ফসলের ক্ষেত এখন পানির নিচে ডুবে আছে। এ অবস্থায় ৬/৭ দিন থাকলে সে সব থেকে কোনো ফসল ফলবে না বলে স্থানীয় কৃষক রুহুল আমিন, সোহরাব হোসেন ও আলম মিয়া জানালেন।
তাদের ৩ জনের প্রায় ৭ বিঘা জমির ফসল ও ধানের বীজতলা, সবজি বাগান এখন পানির নিচে ডুবে আছে।
উপজেলার নোহালী, কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদের অনেকে ঘরের জিনিসপত্র রক্ষা করতে বাড়িতে উঁচু মাচান করে সেখানে রাতযাপন করছে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, গত শুক্রবার রাত থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করে। ফলে ইউনিয়নের নদীর বাম-তীরের প্রায় সব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য দ্রুত খাদ্য সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। এ দিকে পরিস্থিতি সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলীমা বেগম। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য তালিকা তৈরির কাজ করা হচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে খাদ্য সহায়তার জন্য মাথা পিছু ১০ কেজি চাল পর্যায়ক্রমে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে এই বিপুলসংখ্যক জনগণের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঘরের ভিতরে-বাইরে পানি থাকায় ঠিকমতো রান্না করতে না পেরে অনেকই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
গো-খাদ্যের চরম সংকটে দিশেহারা বানভাসিরা। পয়ঃনিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিভিন্ন রোগব্যাধির আশংকা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, পানি না কমা পর্যন্ত মানুষজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। তার ইউনিয়নে ২ হাজার ৫শ’ মানুষজন পানিবন্দি রয়েছে। গত কয়েকদিনে পর্যায়ক্রমে ১ হাজার ৮শ’ জনকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
বন্যাকবলিত গ্রামগুলো হল, গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রামওঝা, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চরের প্রায় ১৭শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চরের হুমায়ুনের বাঁধের ১শ’ ফুট ভেঙ্গে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।
গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, জয়দেব, রাজবল্লভের কিছু অংশ নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মর্ণেয়া ইউনিয়নের চর মর্ণেয়া, নীলারপার, নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, চরনোহালী, বৈরাতির গ্রামসহ তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে তা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং তিস্তার ভাটি অঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।